সোনার মুকুট আর ছাগল কান্ড!!
সময়টা ১৯৭৪ সাল, স্বাধীনতার পর হঠ্যাৎ দেশে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিল, তীব্র খাদ্য সংকট পরবর্তি সময়ে দূর্ভিক্ষে রুপ ধারণ করে। চারিদিকে খাবারের জন্য মানুষের হাহাকার, গ্রামের মানুষেরা দুমুঠো খাবারের জন্য শহরে এসে ভিড় করতেছে, তৎকালীন সরকার অনেক গুলো লঙ্গরখানা খুলেছিল কিন্তু সীমাহীন অবব্যাস্থার কারনে রাজপথে খেতে না পারা মৃত মানুষের সংখ্যা দিন কে দিন বাড়তে থাকে,এমন নাজুক সময়ে জাতীয় সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হল সোনার মুকুট পড়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দুই ছেলের বিয়ের ছবি, পুরো দেশজুড়ে হৈচৈ পড়ে গেল। পত্রিকার একদিকে ক্ষুর্ধাত মানুষের কংকালসার ছবি আর অন্যদিকে মহাধুমধাম করে সোনার মুকুট পড়িয়ে রাজপুত্রদের বিয়ের ছবি, একদিকে তীব্র খাদ্য সংকটে
মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা অপরদিকে এই ছবি জনমনে সরকারের প্রতি তীব্র ক্ষোভ আর হতাশার জম্ম নেয়, সরকার প্রধানের ছেলের বিয়েতে একটু খরচপাতি হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু দেশের মানুষ খেলো নাকি না খেযে মারা গেল, সেটা নিয়ে কারও মাথা ব্যাথা নেই, ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষে সরকারী হিসাবে প্রায় ২৭০০০ মানুষ মারা যায়, কিন্তু বেসরকারী হিসাব মতে এক থেকে দেড় লাখ মানুষের মৃত্য ঘটে। দেশের ঐ দুঃসমযের যদি কেউ সোনার মুকুট পড়িয়ে বিয়ে দেয তবে তো মানুষকে আরও ক্ষেপিয়ে তুলবে হ্যা আসলেই তাই হয়ে ছিল, ঐ সময়ের সরকার প্রধান তার ছেলেদের বিয়েতে সোনার মুকুট পড়িয়ে বিয়ে দেয়াতে সাধারণ জনগণ কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি।এটাই স্বাভবিক।
এর কিছুদিন পর একটি সামরিক অভূর্থানের ভিতর সরকার পতন হয়, স্বাধীনতার পর যে জনপ্রিয়তা নিয়ে সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল তার শেষটা ছিল অনেকটা মর্মান্তিক আর জনপ্রিয়তা অনেকটা শূন্যের কোঠায় চলে যায়,একদিকে ক্ষুধার্ত জনতা অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর ছেলের সোনার মুকুট পড়িয়ে বিয়ে সব কিছু মিলে দেশের অবস্থা ভয়াবহ অস্থিতিশীল করে তোলে, সেই সাথে বাকশাল গধন, রক্ষী বাহিনীর বিতর্কিত কর্মকান্ড সব কিছু মিলে সরকার সাথে জনগনের বেশ দূরত্ব তৈরি করে দেয়।বলতে গেলে দূর্ভিক্ষের সময় প্রধানমন্রীর ছেলের সোনার মুকুট পড়িয়ে বিয়ের আযোজনটা ছিল জনগনের সাথে এক নিষ্ঠুর তামাশা যেন। কালোবাজারি, খাদ্যের বন্টনের অবব্যাসহপনা সবকিছু মিলে জনগন যখন এক প্রকার বিক্ষুব্ধ ঠিক তখন প্রধানমন্ত্রীর ছেলের বিলাসিকতার বিয়ে সবকিছু প্রমাণ করলো জনগনের কষ্ট সরকারের কাছে কোন গুরত্ব নেই। দেশের বেশীরভাগ মানুষ যখন ক্ষুধার জ্বালায় মরতেছে ঠিক তখন সরকারী সমর্থক, আমলা, তোষামদকারীরা, মজুদদারী, কালোবাজারীরা ফুলে ফেপে বিক্তশালী হয়ে উঠেছে অপরদিকে জনগণ যেন গরীব থেকে গরীব হচ্ছে। অপরদিকে ঐ সময়ের সরকারের সমাজতান্ত্রিক কায়েম ব্যাবস্থা ভাবনার সাথে এ যেন নির্মম পরিহাস। এর পরের ইতিহাস সবার জানা।
এবার আসা যাক ২০২৩ সাল পবিত্র ইদুল আজহা বা কোরবানী ঈদ, জনগন তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানীর পশু কিনতেছে, উচ্চ মূল্য স্ফীতি আর পশুর দাম চড়া হওযার কারণে মানুষ শরীকে কোরবানীর পশু কিনতে বাধ্য হচ্ছে, শরীকবদ্ধ হয়ে কোরবানী দিলেও প্রতি শরীকে ( অংশে) প্রায় ২০০০০ টাকার মতন বা তার বেশী বাজেট পড়তো, এমনবস্থায় একটা ছাগল যেন সব হিসাব নিকেশ পাল্টে দেয়,সাদেক এগ্রোর একটি ছাগল ১৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করলো, এ কীভাবে সম্ভব? একটা ছাগলের দাম ১৫ লক্ষ টাকা, ভাবা যায়, তথাকথিত উচ্চ বংশীয় এই ছাগলের দাম ১৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়, এত দামের এই ছাগলের ক্রেতা একজন তরুণ বয়সী সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকটার ছেলে।
টিভিতে, ফেসবুক, ইউটিউব সহ সব জায়গায় এই ছাগল বিক্রির খবর, পুরো দেশে হটকেক পরিনত হয় এই ছাগলটি,একদিকে জিনিস পত্রের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে আপরদিকে একজন সরকারী কর্মকর্তার ছেলের ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাগল ক্রয়, সাধারণভাবে মানুষের মনে বিরুপ মনোভাব পড়ে।সরকার ঘনিষ্ঠ মানুষেরা হঠ্যাৎ করেই আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাচ্ছে আর সমাজের মধ্যবিক্ত, নিম্নবিক্ত জনগনের জীবনযাত্রার মান আরও নিম্নতর হচ্ছিল। সরকারের সীমাহিন দূনীতি, অর্থ পাচার,
ভোটহীন নির্বাচন, দূর্বল পররাষ্ট্র নীতি, ভারতকে এক একতরফা সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া নিয়ে মানুষ সরকারের প্রতি এমনিতেই ক্ষেপে ছিল এর ভিতর এই ছাগল কান্ডে মানুষ আরও বেশী ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে,সমজের এক শ্রেণীর মানুষ আরাম আয়েশের জীবন যাপন
আর অপরদিকে দারিদ্রের পিষাতলে পিষ্ট হছিল সাধারণ মানুষ,এর কিছুদিন পরেই কোটা বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের আদোলন রুপ নেয সরকার পরনের ছাত্রজনতার আন্দোলন, এৰ দিনের পুষে থাকা রাগ ক্ষোভ যেন বিস্ফরিত আকার ধারণ করে, পরবতীর সব ঘটনা তো আমরা সকলেই জানা,১৯৭৪ এর সোনার মুকুট পড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছেলের বিয়ে এর কিছুদিন পর মর্মান্তিক ঘটনা আর ২০২৩ এ ছাগল কান্ড কী চমৎকার সব কিছু মিলে গেল।
সরকার পতনের জন্য একটি মাত্র ছাগল নয় আরো অনেক ইস্যূ ছিল। কিন্তু ছাগলটি যেন সরকারের লাগামহীন অবৈধ কর্মকান্ডের "প্রতিক" হয়ে উঠেছিল। একটি ছাগল উচ্চমূল্য সরকার পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হয়ে দাড়ায়।
সরকারকে সব সময় জনগনের Pulse বুঝতে হবে। জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে আবার কমে কিন্তু একটি সাধারণ ছাগলের দাম যদি ১৫ লক্ষ টাকা হয় আর তা যদি খুব সহজেই বিক্রি হয় তাহলে সহজেই অনুমেয় সমাজের রন্ধে রন্ধে কী পরিমাণে দূর্নীতি ঢুকে গেছিল।
আল্লাহ কুরআনে বলেন- সীমা লঙ্ঘন কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯০) তাহলে স্পষ্ট যে আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।
উপড়ের দুটি ঘটনাই তার প্রমাণ।
লেখক- জুয়েল মাহমুদ
Comments
Post a Comment