প্রফেসর ডাঃ নুরুল আমিন নিভৃতচারী এক আলোকবর্তিকা।

প্রফেসর ডাঃ নুরুল আমিন নিভৃতচারী এক আলোকবর্তিকা।


চট্টগ্রামের খুলশীর জাকির হোসেন রোডের ডায়বেটিক হসপিতালের পাশে সাহিক নামক একটি প্রতিষ্ঠান প্রায়ই চোখে পড়ে। অনেকটা প্রচার প্রচারনার অভাবে প্রতিষ্ঠানতা কী ও তার কর্মকান্ড কী অনেকেই তা জানে না। প্রতিষ্ঠানের সামনে সাইনবোর্ড অনেকটা পুরাতন হয়ে গেছে আমি একদিন পাশের ডায়বেটিক হাসপাতালে কাজ শেষ করে কী মনে করে যেন সাহিকে ঢু মারলাম। বেশ বড় জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত নাক, কান ও গলা সমস্যা যাদের আছে তাদের জন্যই এই হাসপাতাল। আবার যাদের এই সমস্যা আছে তাদের জন্য বিশেষায়িত স্কুলও আছে। শহরের ভিতর যে এই রকম কোন প্রতিষ্ঠান আছে অনেকের কাছেই তা অজানা। তাদের একজন কর্মকতার কাছ থেকে জানতে পারলাম এটি মূলত ঢাকার একটি শাখা। মূল প্রতিষ্ঠান ঢাকায় অবস্থিত। মূলত বাইরে থেকে দেখলে বুঝা যায় না এত প্রয়োজনীয় প্রচিষ্ঠান চট্টগ্রামে আছ। প্রচারের অভাবে একটু কম রোগীর ভিড় দেখলাম।বাসায় এসে কাজের চাপে সবকিছু ভূলে গেলাম। একদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হঠ্যাৎ খবর পেলাম সাহিকের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডাঃ মোঃ নুরুল আমিন ইন্তেকাল করেছেন। হঠ্যাৎ মনে পড়লো কিছুদিন আগেও তো সাহিকে গেছিলাম, তাই সাহিক নিয়ে একটু পড়ালেখা করলাম। অবাক হলাম তাদের কর্যক্রম দেখে। আমাদের দেশে অনেক শিশু আছে যারা ছোট বেলা থেকেই কানে কম শুনে বা একেবারেই শুনেনা, আবার অনেকে কথা পরিস্কার করে বলতে পারে না, মূলত নাক, কান, গলা নিয়ে যাদের সমস্যা তাদের জন্যই এই সাহিক। অনেকটা নিরবে নিভূতে দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে তারা অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। আর এই সব কিছুর পেছনের নেপথ্যের কারিগর হলেন প্রফেসর ডাঃ নুরুল আমিন। প্রফেসর ডাঃ নুরুল আমিন নামটা আমাদের কাছে খুব একটা পরিচিত নয়। কিন্ত অনেকটা নীরবে নিভৃতে তিনি এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কত মানুষের উপকার করছেন তার সংখ্যা অজানা। উনার বায়োগ্রাফি পড়ে জানতে পারলাম তিনি চট্টগ্রামের চন্দনাইশের সন্তান, ব্যাক্তিগত ভাবে উনি অনেক ছাত্রের শিক্ষা খরচের ব্যায় বহন করেছেন। উনার হাত ধরে অনেকে পরবর্তীতে অনেক বড় চিকিৎসক হয়েছেন। এই কাজগুলো উনি করেছেন অনেকটা আড়ালে, চিকিৎসা পেশা একটি মহৎ পেশা, সবাই এই পেশায় আসতে পারেন না। এর জন্য দরকার মেধা ও পরিশ্রম। আবার অনেকে পেশায় আসলেও সেবার মানসিকতা কম থাকে, সেদিক থেকে অনেকটা ব্যাতিক্রম ছিলেন প্রফেসর ডাঃ নুরুল আমিন। PHD ডিগ্রিধারী প্রফেসর ডাঃ নুরুল আমিন ইচ্ছা করলে বিদেশে পাড়ি জমাতে পারতেন তা না করে দেশের চিকিৎসা সেবায় যে অসমান্য অবদান রেখেছেন তার জন্য আসলেই কোন শব্দ ব্যবহার করলেও ভূল হবে। প্রচারবিমূখ এই মানুষটার মৃত্যতে পেলনা রাষ্ট্রীয় কোন শোক, জীবদ্দশায় রাষ্ট্রীয় কোন পুরস্কার পেয়েছেন কীনা সন্দেহ অথচ অনেক রহিমমউদ্দিন - সলিমউদ্দিন ( রুপক নাম) তৈলবাজী করে পেয়ে যান রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। রাষ্ট্রীয় পুরস্কার উনি না পেলেও অসংখ্য মানুষের ভালবাসা উনি পেয়েছেন। ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন " যে দেশে গুণের সমাদর নেই সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না।"

অনেকে কোন কিছু পাবার আশায় অল্প কিছু কাজ করে নাম কামায় আবার অনেকে নিরবে নিভূতে নিরলসভাবে দেশের সেবা করে যায়। প্রফেসর ডাঃ নুরুল আমিনের মতন মানুষেরা বেঁচে থাকবেন উনার কর্মের মাধ্যমে। উনার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান আরো সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে দেশের সেবায় নিয়েজিত থাকবে সেই দোয়া করি।

প্রফেসর ডাঃ মোঃ নুরুল আমিনের বায়োগ্রাফি লিঃক: https://youtube.com/@sahic123?si=V5Et5GfoEoLJutwf


লেখক: জুয়েল মাহমুদ।


Comments

Popular posts from this blog

হারিয়ে যাওয়া কিছু বাংলা ব্যান্ড।

সোনার মুকুট আর ছাগল কান্ড!!

১০টি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে খুবই উপকারী।