গ্রেটার ইসরাইল হতে আর কত দূরে?

 






এক ইসরাইলের কাছে কী সবাই পরাজিত।

আজ সকালে ইসরাইল জর্ডান ও ইরাকের উপড় দিয়ে উড়ে এসে ইরানকে মেরে চলে গেল। এত নিখুত আক্রমন এত সহজে কীভাবে সম্ভব। জর্ডান, ইরাকের আকাশ সীমা অতিক্রম করে এসে ইরানে আক্রমন এক অবাক করা বিষয়  বটে। এতে ইরানের ৬ জন শীর্ষ পরমানু বিজ্ঞানী সহ তাদের সামরিক বাহিনীর প্রধান কর্মকর্তা নিহত হন। ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এতই দূর্বল যে তারা তাদের শীর্ষ নেতাদেরকেউ রক্ষা করতে পারলো না। নিশ্চয় নিখুত গোয়েন্দা তথ্যের ভিক্তি করেই এই হামলা চালানো হয়েছে।সমরক্ষেত্রে ইসরাইল আসলেই এক বিস্ময়কর নাম। আরবরা তা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে। মাত্র ছয় দিনের যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়ে বুঝে গেছে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে তারা শুধু ভূমিই হারাবে আর কিছু করতে পারবে না তাই গাজায় চলমান গনহত্যায় তারা নিশ্চুপ। মাঝে মধ্যে ২-১টি প্রতিবাদ বা উদ্বেগ প্রকাশ ছাড়া তাদের আর কিছু করার নাই। হামাসের সাথে ইসরাইলেব  যুদ্ধে হিজবুল্লাহ এমন মার খেয়েছে যে তারা আর আওয়াজই করতে পারতেছে না। আর হামাস মাঝে মধ্যে ২/১ টি আক্রমন করে নিজেদের অস্তিত্ব জাগান দেয়। তাদের প্রায় সব শীৰ্ষ নেতাদের তারা হত্যা করেছে। অন্যদিকে আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়াতে ইরানের প্রভাব বলতে আর কিছুই নেই। সিরিয়ার সব সামরিক স্থাপনা ছিল তা প্রায় সব ইসরাইল আক্রমণ করে ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকের এই নিখুত আক্রমনে ইরানের পরমাণু কর্মসূচী স্বাভাবিক ভাবেই আরও বিলম্বিত হবে। পাল্টা জবাবে ইরান যে ড্রোন আক্রমন করেছে এতে ইসরাইলের কিছুই হবে না। কেননা ইসরাইলের আছে শক্তিশালী আয়রন ডোম।

আয়রন ডোমের ব্যাবহার


হযতো আয়রন ডোমকে ফাকি দিয়ে ২/১ টি ড্রোন হয়তো ইসরাইলের মাটিতে আঘাত হানবে এর বেশী কিছুই হবে না। হামাস- ইসরাইলের যুদ্ধে হামাস ও হিজবুল্লাহ হারিয়েছিল তাদের শীর্ষ নেতাদের আর আজ ইরান ইসরাইলের এক  আক্রমনেই বলতে গেলে তাদের কোমর অর্ধেক ভেঙ্গে গেছে। ইরান কল্পনাও করতে পারে নি ইসরাইল কীভাবে পারলো তাদের শীর্ষ নেতাদের অবস্থান চিহ্নিত করতে। আসলে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা এত দক্ষ যে ইরানের সব খবর তারা আগে থেকেই জানতো। ইসরাইলের প্রায় ২০০টি বিমান এই হামলা করে কত সহজে আবার ফিরে গেল। ইরান ১টি বিমানও ভূপাতিত করতে পারলো না। এর থেকে পাকিস্তান অনেক দক্ষ কেননা তারা  ভারতের ৬টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে সম্প্রতি সংঘর্ষে। ভারত আর পাকিস্তান পাশাপাশি রাষ্ট্র অথচ ইসরাইল ২টি দেশের উপড় দিয়ে উড়ে এসে ইরান আক্রমন করলো, ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা তাহলে কী করতেছিল। ইসরাইল থেকে ইরান ভোগলিক ভাবে অনেক দূরে। ০২টি দেশের বর্ডার ক্রস করে ইরানকে আক্রমন করতে হয়েছে। অনেকটা বর্তমান পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ভৌগলিক দূরত্বের মতন। এক বার ভাবেন, পাকিস্তান যদি বিমান নিয়ে বাংলাদেশে আক্রমন করতে আসে তবে তাকে ভারতের আকাশসীমা অতিক্রম করে আসতে হবে। এতক্ষনে বাংলাদেশ নিশ্চয় জেনে যাবে পাকিস্তানের আক্রমনের কথা। সুতরাং বাংলাদেশ যথেষ্ট সময় পাবে তা প্রতিহত করার। জর্ডান মুসলিম দেশ হলেও ইসরাইলের সার্পোটার, তারা ইরানকে কখনও তা জানাবে না। কিন্তু জর্ডানে কী ইরানের গোয়েন্দা সংস্থার কেউ নেই এই আক্রমণের কথা জানানো। এই আক্রমনের ১ দিন আগেই ইরাক থেকে মার্কিন দূতাবাস থেকে আমেরিকা তাদের অনেক কর্মকর্তা সরিযে নিয়েছে। তাই ইরানের সর্তক হওয়া উচিত ছিল।  ইসরাইল কখনও ইরান দখল করবে না তাদের মূল লক্ষ্য হল ইরানের পারমানবিক কর্মসূচী সমপূর্নরুপে ধ্বংস করা, কেননা ইরান যদি একবার  পারমানবিক বোমা বানাতে পারে তবে তা হবে ইসরাইলের জন্য অস্তিত্ব সংকট।

গ্রেটার ইসরাইল  হতে আর কত দূরে?

Greater Israel কী সে বিষয়ে আগে জানতে হবে। হিব্রু বাইবেল অনুসারে ইশ্বর কতৃর্ক প্রতিশ্রতিকৃত ভূমি যা মিশরের নীল নদ হতে ইরাকের ইউফ্রেটিস পর্যন্ত বিস্তৃত।যে প্রতিশ্রতি তিনি নবী আব্রাহাম ( ইব্রাহিম আ:) কে দিয়েছিলেন। যা বর্তমানে অনেকগুলো দেশের মানচিত্রকে চিহ্নিত করে। যা বাস্তবায়ন করলে এই দেশগুলোর ভূমি অথবা সমগ্র দেশই দখল করতে হবে। মজার বিষয় হল সব দেশগুলো হল মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশ সমূহ। যারা বর্তমানে ইসরাইলের ভয়ে সর্বদা তটস্ত্র হয়ে থাকে। বর্তমান দেশ ও অঞ্চলসমূহ হল:


বর্তমান ইসরায়েল

পুরো পশ্চিম তীর (West Bank)

গাজা স্ট্রিপ

জর্ডান এর কিছু অংশ

লেবানন এর দক্ষিণাংশ

সিরিয়া এর গোলান হাইটস ও কিছু কেন্দ্রীয় অংশ

ইরাক এর পশ্চিমাংশ

সৌদি আরব এর উত্তরাংশ

মিসর এর সিনাই উপদ্বীপ পর্যন্ত। 

অর্থ্যাৎ মিশর থেকে শুরু করে লেবানন, সিরিয়া, জর্জান, ইরাক হয়ে সউদি আরব এর একাংশে পর্যন্ত, আর গাজা ও পশ্চিম তীর তো হাতের মুঠোয়, এই দুটো অঞ্চল দখল না করে তারা তাদের সৈন্যদেরকে অনেকটা ব্যাস্ত রাখে ফিলিস্তিনিদের অত্যাচার করতে যাতে ইসরাইলী সৈন্যরা ঝিমিয়ে না পড়ে সর্বদা যুদ্ধের আবহ মুডে থাকে। একবার ভাবুনতো সেই মিশর থেকে ইরাক পর্যন্ত যদি ইসরাইলের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র হয় তবে ইসরাইলের মানচিত্রতা কত বড় হবে। মোট ৬টি দেশ মিলে হবে তথাকথিত Greater Israel,

এই ৬টি দেশকে পরাস্ত করা কী সম্ভব, আসলেই বর্তমান সময়ে তা পুরোপুরি অবাস্তব কিন্তু এই অসম্ভবকে জয় করার জন্য ইসরাইল ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। হয় যুদ্ধ নয়তো কুটনৈতিক ভাবে চাপে ফেলে তারা তা আদায় করবে, বর্তমান এই ৬ রাষ্ট্রের সাথেই ইসরাইলের সাথে ভালই সম্পর্ক আছে। মিশর অনেক আগে থেকেই ইসরাইলের সাথে ভাল সর্ম্পক রয়েছে। আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইল মিশরের বিমানবাহিনীকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল। তাই মিশর আর ইসরাইলের সাথে লাগতে চায় না। আর জর্ডান তো পুরোপুরি ইসরাইল ভক্ত, ইরান যখন ইসরাইল আক্রমন করেছিল জর্ডান তখন ইরানের ক্ষেপনাস্ত্র গুলো তাদের আকাশ সীমানাতেই  পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল। এত বিশ্বস্ত প্রতিবেশী যে ইসরাইল পেয়েছে তা তারা নিজেরাও ভাবতে পারেনি।আর লেবানন এর হিজবুল্লাহ তাদের শীর্ষ নেতাদের হারিয়ে অনেকটা নেতৃত্ব শুন্যতায় ভুগতেছে। অনেকে ভয়ে তাদের শীর্ষ নেতা হতে চাচ্ছে না কেননা যেই হবে তাকেই হত্যা করা হচ্ছে। চিন্তা করে দেখেন একটা সংগধনের chief leader কেউ হতে চাচ্ছে না। আর দেশের চরম অর্থনৈতিক মন্দা অবসহা আর এই সব যুদ্ধে লেবানন সরকার অনেকটাই বিরক্ত, মানুষ শান্তি চায়, যে যুদ্ধে তুমি জিতেবে না তা জেনেও সেই যুদ্ধে জড়ালে স্বাভাবিক ভাবেই সবাই বিরক্ত হবে।আর সিরিয়া তো এক প্রকার ইসরাইলের কব্জায়, আসাদ সরকার পতনের পর সিরিয়াতে ঢুকে যত সামরিক স্থাপনা আছে তা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইল, তাদের নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনী বলতে আর কিছু নেই। সিরিয়ার অনেক অভ্যন্তরে ইসরাইলী বাহিনী অবস্থান করতেছে।আর বাকী থাকলো ইরাক ও সউদি আরব, ইরাকের অভন্তরে অনেক মার্কিন ঘাটি রয়েছে। তাই এই ঘাটিগুলো ব্যাবহার করে তাদের পশ্চিমাংশ দখল করা মোটেও কঠিন কিছু না। সাদ্দাম পরবতী সময়ে ইরাককে অনেক কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। অনেক দল উপদল তৈরি হয়েছে যারা নিজেদেরকে নিয়ে কলহে ব্যাস্ত, সেই সাথে সেই ঐতিহাসিক শিয়া - সুন্নি দ্বন্দ্বতো রয়েছে তাই একটু কষ্ট হলেও ইসরাইল তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে, এবার পবিত্র ভূমি সউদি আরব। সউদি আরব আসলে কিছুটা বেকাযদায় আছে, তারা না পারতেছে ইসরাইলের সাথে সরাসরি সর্ম্পক করতে আর না পারতেছে যুদ্ধে জড়াতে। তাই তারা বুদ্ধি করে প্রতিবছর আমেরিকা থেকে আর বিলিয়ন নয়। এখন ট্রিলিয়ন  ট্রিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনে, সম্প্রতি ট্রাম্পের সফরে যা সমপন্ন হলো। ১ ট্রিলিয়ন লিখতে কয়টা শূন্য লিখতে হয় জানলে অবাক হবেন, ১২ টা শূন্য লিখতে হয় অর্থ্যাৎ ১ ট্রিলিয়ন সমান ১০০ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কিনার কারণ মার্কিন প্রশাসনকে খুশি রাখা। পশ্চিমাদের মূল ব্যাবসাই হল অস্ত্র বিক্রি। যত যুদ্ধ হবে ততই তাদের লাভ, যুদ্ধ বাজলেই দেদারসে বিক্রি হবে তাদের অস্ত্র, মানুষের বোবা কান্না আর শিশুর হাহাকার তাদের কাছে যেন উপহাস মনে হয়।সউদি আরব ভাল করেই জানে তাদের ক্ষতি হলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে মার্কিন অস্ত্রের ব্যাবসা।তাই তারা রুটিন মাফিক এই অস্ত্র কিনে থাকে। আর আমেরিকা আর ইসরাইল ভাই ভাই সম্পর্ক হলেও অস্ত্র ব্যাবসাতে কেউ ছাড় দিবে না।

তাই সউদির এই অংশটা দখল নিতে ইসরাইলকে বেশ বেগ পেতে হবে।

প্রযুক্তির যুগে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। পশ্চিমা দেশ সমূহ এবং ইসরাইল গবেষণা কাজে বেশী মনোযোগ দেয়, তাদের বাজেটের একটা বড় অংশই থাকে গবেষণা খাতে। যে জাতি যত বেশী গবেষণা কর্মে নিয়োজিত থাকবে তারাই পুরো পৃথিবী নিযন্ত্রন করবে। ইসরাইল যুদ্ধে প্রযুক্তির চরম সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে বিধায় মধ্যপ্রাচ্যে সবার মাথার উপড় ছড়ি ঘুরাতে পারতেছে। ইরানকে সবচেয়ে আধুনিক ও প্রযুক্তির দেশ মনে হত। কিন্তু একটা অভিযানেই তারা হারিয়েছে তাদের সামরিক প্রধানকে, যুদ্ধ ছাড়াই সামরিক প্রধানকে হারিয়ে বসলে যুদ্ধটা করবে কে? সারা বছর শুধু কে হিজাব পড়লো আর কে পড়লো না তা নিয়ে পড়ে না থেকে নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর করলে আজকে এই লজ্জায় পড়তে হতো না।Greater Israel করা ইসরাইলের জন্য কষ্ট ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ইসরাইল যে ইরান আক্রমন করলো তার আগেও তাদের দেশের ভিতর অনেক বড় বড় বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছিল। ইরানের অভ্যন্তরে ইসরাইলী agent না থাকলে তা কিছুতেই সম্ভব ছিল না।  এই অভিযানের পূর্বেই হয়তো ইরানের  আকাশ  প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ  অকেজো করে দিয়েছে নয়তো বসে বসে ইরান মার খেল কেন। ইরান যেখানে  ইসরাইলি agent দেরকে সনাক্ত  করতে পারলো না সেখানে অন্য দেশ গুলো কীভাবে পারবে। ঘড়ের শত্রু বিভীষনকে আগে সনাক্ত করতে হবে নয়তো Greater Israel হতে আর বেশীদিন অপেক্ষা করতে হবে না।



লেখক : জুয়েল মাহমুদ।



Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

হারিয়ে যাওয়া কিছু বাংলা ব্যান্ড।

সোনার মুকুট আর ছাগল কান্ড!!

১০টি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে খুবই উপকারী।